সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রোম করা হবে
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালোই আছেন। আমি আপনাদের দোয়া ভাল আছি।আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রোম নিয়ে
। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
বলেছেন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হবে ।
তিনি বলেছেন, প্রযুক্তির
কল্যাণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তাতে অচিরেই দেশের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে উন্নীত করা হবে। সোমবার (২ জুন, ২০১৫)
বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কবরী হলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের তৃতীয়
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন।
শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হলে আগে শিক্ষকদের গুণগত
পরিবর্তন দরকার মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু শিক্ষক শিক্ষা ও শিক্ষকতায় কলঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় মন্ত্রী শিক্ষকদের পেশায় ও নৈতিকতার দিক থেকে
সাবধান হওয়ার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে হলে তরুণদের আলোকিত করতে হবে।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম মেধার দিক থেকে দরিদ্র নয়। যেকোনো পরিস্থিতি, বাস্তবতা মোকাবেলা করার স্বক্ষমতা তাদের রয়েছে।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পিঠে বইয়ের
বোঝা নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষানুরাগীদের সমালোচনা প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জ্ঞানের পরিধিও
বেড়েছে। পাঠ্যসূচিতে সেসব যোগ হচ্ছে। ফলে বইয়ের বোঝা কমানো কঠিন।
তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২০১৬ সাল
থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে ট্যাব দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বইয়ের
বোঝা কমাতে এ উদ্যোগ কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশেষ
অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন
ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন অনেকেই এ নিয়ে কৌতুক করেছেন।
দলের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ধারণাই ছিলো
না ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে বর্তমানে আজ দেশের
প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আজ সেবায় পরিণত হয়েছে।
একদিন
দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজের প্রতিটি ক্লাসরুম মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তরিত
হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
২০১২
সালের ২০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের শুভ উদ্বোধন করেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করে সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা
নিয়মিত পাঠদান করে আসছে।
‘তথ্য-প্রযুক্তিতে শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তি’- এই স্লোগান সামনে রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণি
কার্যক্রম আরও আকর্ষণীয়, আনন্দময় ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ স্থাপন করা হয়।
একসেস টু
ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের কারিগরি সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের ২৩
হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৪ হাজার
৫০০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করেছে। পাশাপাশি
প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষক প্রশিক্ষকগণকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও ডিজিটাল
কনটেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
শিক্ষকরাই
শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। শিক্ষকদের তৈরি
কনটেন্টগুলো ডিজিটাল কনটেন্ট, ভিডিও, অ্যানিমেশন ‘শিক্ষক
বাতায়ন’
(teachers.gov.bd) নামের
শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করা হয় এবং একজন শিক্ষকের কনটেন্ট অন্য শিক্ষকরা সহজেই
সংগ্রহ ও ব্যবহার করছেন।
শিক্ষক
বাতায়নে ৬০ হাজারেরও বেশি সদস্য শিক্ষক এবং ৪০ হাজারের বেশি ডিজিটাল কনটেন্ট
রয়েছে। এছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম অনলাইনে ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং ও মেনটরিং করার জন্য ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি অনলাইন ড্যাশবোর্ড (mmc.e-service.gov.bd)
তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনায় নেতৃত্ব, জেলার
সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম
ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নিবন্ধন, শিক্ষক
প্রশিক্ষণ, কর্মশালার আয়োজন এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত
মনিটরিং ও মেনটরিংসহ শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে অসামান্য অবদান রাখার জন্য
পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া
ও সিলেট জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকতা, রংপুর
টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ময়মনসিংহ
ও ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের একজন শিক্ষক প্রশিক্ষককে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট প্রতিযোগিতা ২০১৪-এর বিজয়ী ৩৪ জন
শিক্ষক ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সফলভাবে পরিচালনার জন্য জেলা পর্যায়ের ডিজিটাল
উদ্ভাবনী মেলায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত ৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ‘বর্ষসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১৫’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন
আনোয়ারের সভাপতিত্বে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মেছবাহ উল আলম।
এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি এডভাইজর আনীর চৌধুরীসহ
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং এটুআই
প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment